বাজারভিত্তিক উদ্যান কৃষির বৈশিষ্ট্য

বাজার বাগান কৃষির বৈশিষ্ট্য:

যে উন্নত ও আধুনিক কৃষি ব্যবস্থায় শহরের বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে তার উপকণ্ঠে বিভিন্ন আয়তনের উদ্যানে ফুল, ফল, শাকসবজি ও ভেষজ উদ্ভিদ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয় তাকে বাজার বাগান কৃষি বা বাজারকেন্দ্রিক উদ্যান কৃষি বলা হয়।
 
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উদ্যান কৃষি ট্রাক ফার্মিং ও যুক্তরাজ্যে মার্কেট গার্ডেনিং নামে পরিচিত।
 
উদ্যান কৃষিতে উৎপন্ন শাকসবজি, ফলমূল প্রভৃতি বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে ট্রাকের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয় বলে, উন্নত দেশগুলিতে এই ধরনের কৃষি পদ্ধতিকে ট্রাক ফার্মিং বলা হয়।
 

উদ্যান কৃষির শ্রেণীবিভাগ:

বাজারকেন্দ্রিক উদ্যান কৃষিতে প্রধানত চার ধরনের ফসল উৎপাদিত হয়। যেমন –
 
1. ফ্লোরিকালচার: যে কৃষিতে সারাবছর ফোটে এবং মরশুমি ফুলের চাষ এবং পাতাবাহার গাছের চাষ করা হয় তাকে ফ্লোরিকালচার বলে।
 
উৎপাদিত ফুল গাছ: গোলাপ, টিউলিপ, সূর্যমুখী, চন্দ্রমল্লিকা, রজনীগন্ধা, নয়নমণি, ডালিয়া ও গাঁদা প্রভৃতি।
 
2. পোমামকালচার: উদ্যান কৃষিতে সারা বছর পাওয়া যায় এমন ফল ও মরশুমি নানা ফল ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে চাষ করাকে পোমামকালচার বলা হয়।
 
উৎপাদিত ফল: আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, পেয়ারা, পেঁপে, আপেল, নাশপাতি ও স্ট্রবেরি প্রভৃতি।
 
3. ওলেরিকালচার: অনুকুল জলবায়ুতে ছোট ছোট বাগানে উদ্যান কৃষির মাধ্যমে শাকসবজি চাষকে ওলেরিকালচার বলে।
 
উৎপাদিত সবজি: ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, পালং শাক, পটল, কুমড়ো, ক্যাপসিকাম, গাজর ও বরবটি প্রকৃতি।
 
4. ভেজষ চাষ: উদ্যান কৃষিতে নানা ভেজস উদ্ভিদের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে চাষ করাকে ভেজষ চাষ বলে।
 
উৎপাদিত ভেষজ উদ্ভিদ: সর্পগন্ধা, সিঙ্কোনা, বাসক, নিম, অর্জুন, ঘৃতকুমারী ও কালমেঘ প্রভৃতি।
 

উদ্যান কৃষির  অবস্থান:

উভয় গোলার্ধে নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর ঘনবসতিপূর্ণ বৃহৎ শহরাঞ্চলের উপকণ্ঠে এই কৃষি প্রচলিত রয়েছে।
A. ইউরোপ: যুক্তরাজ্য, জার্মানি, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড ও ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু  অঞ্চলের স্পেন ইতালি ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে।
 
B. উত্তর আমেরিকা: আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা ইত্যাদি।
 
C. এশিয়া: ভারত, ইরান,  তুরস্ক ও ইজরায়েল।
 
D. আফ্রিকা: আলজেরিয়া, লিবিয়া, মিশর ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
 
এছাড়াও আর্জেন্টিনা, চিলি, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশে উদ্যান কৃষি প্রচলিত রয়েছে।
 

উদ্যান কৃষির বৈশিষ্ট্য:

বাজারভিত্তিক উদ্যান কৃষির প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল –
 
1. জমির আয়তন: শহরাঞ্চলের উপকণ্ঠে এই কৃষি গড়ে ওঠার কারণে জমির পরিমাণ স্বল্প এবং জোটের আয়তন জনঘনত্ব অনুসারে ছোট থেকে মাঝারি হয়।
 
2. উন্নত কৃষি প্রযুক্তি: সারা বছর ধরে অধিক ফলন ও আর্থিক লাভের জন্য এই কৃষিতে উচ্চফলনশীল বীজ, কীটনাশক, সার, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
 
3. আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি: উদ্যান কৃষি উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি।  বাণিজ্যিক ভিত্তিক উৎপাদন করার জন্য ছোট জমিতে ছোট ছোট কৃষি সাজ-সরঞ্জাম থেকে ট্রাক্টর, পাম্পসেট ইত্যাদি ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়।
 
4. অভিজ্ঞ ও দক্ষ শ্রমিক: উদ্যান কৃষি মূলত শ্রমনিবিড় কৃষি। পরিচালনগত দক্ষতা, দূরদর্শী, ক্রেতার পছন্দ-অপছন্দ ও বাজার সম্পর্কে অভিজ্ঞ কৃষিশ্রমিক এই কৃষির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
 
5. উৎপাদনশীলতা: সারা বছর ধরে উন্নত প্রযুক্তিতে নিবিড় ভাবে যত্নসহকারে কৃষিকাজ করা হয় বলে উদ্যান কৃষিতে ফসলের উৎপাদন অনেক বেশি হয়।
 
6. বাজারে চাহিদা: প্রধানত চাহিদার ভিত্তিতে বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে অর্থকারী ফসল গুলি উৎপাদন করা হয় বলে এই কৃষি রপ্তানি বাণিজ্যনির্ভর কৃষি। দেশীয় বাজারের তুলনায় আন্তর্জাতিক বাজারে এই কৃষিজাত পণ্যের চাহিদা বেশি।
 
7. উন্নত পরিবহন: এই কৃষিতে উৎপন্ন শাকসবজি, ফুল-ফল দ্রুত পচনশীল বলে অল্প সময়ে দ্রুত বাজারে প্রেরণের জন্য উন্নত সড়ক ও বিমান পরিষেবা আবশ্যক।
 
8. মূলধন: উচ্চফলনশীল বীজ, সার, কীটনাশক, উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি, জলসেচ এবং শ্রমমজুরি প্রভৃতি কারণে উদ্যান কৃষিতে প্রচুর পরিমাণে মূলধন বিনিয়োগ করার প্রয়োজন হয়।
 
9. উৎপাদিত ফসল: উদ্যান কৃষিতে উৎপন্ন ফসলগুলি অর্থকারী এবং বাজার ও বাণিজ্যভিত্তিক। উদ্যান কৃষিতে ফল, ফুল, শাকসবজি ও ভেজো উদ্ভিদ এই চার প্রকারের শস্য উৎপাদন করা হয়।
 
এছাড়াও শাকসবজি, ফল-ফুল চাষের সঙ্গে সঙ্গে মাংস, দুধ ও ডিমের জন্য গবাদিপশু, হাঁস-মুরগীও পালন করা হয়।