নিবিড় জীবিকাসত্ত্বাভিত্তিক কৃষিতে মাথাপিছু উৎপাদন কম হয় কেন
নিবিড় কৃষি: যেসব দেশে জনসংখ্যার অনুপাতে জমির পরিমাণ কম সেখানে প্রচুর কায়িক শ্রম ও মূলধনের সাহায্যে জীবিকাসত্ত্বাভিত্তিক উদ্দেশ্যে ক্ষুদ্র জমিতে নিবিড় ভাবে চাষ-আবাদের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ ফসল উৎপাদনের যে কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়, তাকে নিবিড় কৃষি বলে।
দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব, পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে নিবিড় কৃষি পদ্ধতিতে কৃষি কাজ করা হয়। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, চিন এবং আফ্রিকার নীলনদ অববাহিকা উত্তর পশ্চিম ইউরোপ ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে নিবিড় কৃষিপদ্ধতিতে কৃষিকাজ করা হয়।
নিবিড় কৃষিতে মাথাপিছু উৎপাদন কম হওয়ার কারণ:
নিবিড় জীবিকাসত্ত্বাভিত্তিক কৃষিতে মাথাপিছু উৎপাদন কম হওয়ার প্রধান কারণ গুলি হল –
1. ক্ষুদ্রায়তনের কৃষিজমি: নিবিড় কৃষি পদ্ধতিতে যেসকল দেশগুলোতে চাষাবাদ করা হয়েছে সকল দেশগুলির চাষের জমি ক্ষুদ্রায়তন আয়তন বিশিষ্ট। যৌথ পরিবারের অবলুপ্তি এবং চাষের জমির তুলনায় জনসংখ্যা অধিক বলে মাথাপিছু চাষের জমির পরিমাণ খুব কম। কৃষিজমিগুলি গড়ে 1.5 থেকে 2.5 একর আয়তন বিশিষ্ট হয় এবং জমি গুলি আল দ্বারা বিভক্ত।
2. কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস: অধিক জনবহুল দেশে বিপুল সংখ্যক মানুষের বাসস্থানের চাহিদা পূরণের জন্য কৃষিজমি গুলি বসতজমিতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে, ফলে কৃষি কাজে ব্যবহৃত জমির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে আসছে।
3. মূলধনের অভাব: অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এই কৃষি পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। ফলে তাদের পক্ষে কৃষিতে উচ্চ ফলনশীল বীজ কীটনাশক রাসায়নিক সার উন্নত যন্ত্রপাতির জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়।
4. অধিক জনসংখ্যা: পৃথিবীর অত্যধিক জনবহুল দেশগুলিতে এই নিবিড় জীবিকাসত্ত্বভিত্তিক কৃষিকাজ প্রচলিত রয়েছে। নিবিড় কৃষি পদ্ধতিতে হেক্টর প্রতি উৎপাদনের পরিমাণ খুব বেশি হলেও জনসংখ্যা অধিক হওয়ার কারণেই জনপ্রতি উৎপাদন কম হয়। অর্থাৎ মোট উৎপাদনকে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে মাথাপিছু উৎপাদন তথা মানুষ প্রতি উৎপাদন কম হয়।
সর্বোপরি জনঘনত্ব খুব বেশি হওয়ায় এবং জনপ্রতি জমির পরিমাণ খুব কম হওয়ায় নিবিড় জীবিকাসত্ত্বাভিত্তিক কৃষিতে মাথাপিছু উৎপাদনের পরিমাণ কম হয়।