পৃথিবীর যেসব দেশে জনসংখ্যার তুলনায় জমির পরিমাণ বেশি এবং স্বল্প পরিমাণ দক্ষ শ্রমিক, অধিক মূলধন ও অত্যাধুনিক কারিগরি প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশাল পরিমাণ কৃষি জমিতে যে কৃষি পদ্ধতির মাধ্যমে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন করা হয়, সেই কৃষি পদ্ধতিকে ব্যাপক কৃষি বলা হয়।
উদাহরণ: উত্তর আমেরিকার কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেইরি তৃণভূমি, দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে ও পেরুর পম্পাস তৃণভূমি ইউরেশিয়ার রাশিয়া-ইউক্রেনের স্টেপ তৃণভূমি এবং অস্ট্রেলিয়ার ডাউনস তৃণভূমিতে ব্যাপক কৃষি পদ্ধতিতে কৃষি কাজ করা হয়।
বাণিজ্যিক কৃষি রপ্তানি নির্ভর হওয়ার কারণ:
উৎপন্ন ফসলের অধিকাংশই বাজারে বিক্রি বা রপ্তানি করা হয় বলে, একে বাণিজ্যিক কৃষি বলা হয়। ব্যাপক কৃষি রপ্তানি ভিত্তিক হওয়ার প্রধান কারণ গুলি হল –
1. প্রচুর পরিমাণে ফসল উৎপাদন: ব্যাপক কৃষিতে উচ্চ ফলনশীল বীজ, জলসেচ ব্যবস্থা, কীটনাশক, রাসায়নিক সার এবং উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতির সাহায্যে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণ ফসল উৎপাদিত হয়।
2. স্বল্প জনসংখ্যা ও উদ্বৃত্ত ফসল: সাধারণত পৃথিবীর স্বল্প জনবহুল নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের দেশগুলিতে ব্যাপক কৃষি প্রচলিত রয়েছে। স্বল্প জনবহুল হওয়ায় উৎপন্ন ফসলের অভ্যন্তরীণ চাহিদা কম। ফলে ব্যাপক কৃষিতে প্রচুর পরিমাণে ফসল উদ্বৃত্ত হয়।
3. ফসলের বিশেষায়ণ: ব্যাপক কৃষি ব্যবস্থায় একটি নির্দিষ্ট ফসলের বিশেষায়ণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। ব্যাপক কৃষিতে প্রধানত গম চাষ করা হয়। এছাড়াও বার্লি, ওট, রাই, তৈলবীজ (সয়াবিন) প্রভৃতি শস্য উৎপাদন করা হয়। ফলে স্থানীয় চাহিদা পূরণের পরেও ফসল উদ্বৃত্ত থেকে যায়।
4. আন্তর্জাতিক চাহিদা: আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা রয়েছে এমন দু'একটি (যেমন- গম) ফসলের চাষ ব্যাপক কৃষিতে করা হয়। তাই ব্যাপক কৃষির মূল লক্ষ্যই হলো উদ্বৃত্ত ফসল আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করা।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে ব্যাপক কৃষির সাফল্য সম্পূর্ণরূপে আন্তর্জাতিক চাহিদার উপর নির্ভর করে। এই কৃষির মূল লক্ষ্য হলো উদ্বৃত্ত ফসল রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন। তাই বলা যায় ব্যাপক কৃষি রপ্তানি নির্ভর।