স্থানান্তর কৃষির অবস্থান, বিভিন্ন নাম ও বৈশিষ্ট্য

পাহাড় বা মালভূমি অঞ্চলে উপজাতি গোষ্ঠীরা জঙ্গল কেটে পুড়িয়ে কৃষি জমি তৈরি করে এবং 2/3 বছর ফসল ফলানোর পর জমির উর্বরতা হ্রাস পেলে অন্যত্র চলে গিয়ে সেখানেও একই পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করা হয়, এই কৃষি পদ্ধতিকে স্থানান্তর কৃষি বলা হয়।
 

I. স্থানান্তর কৃষির অবস্থান:

বৃষ্টিবহুল ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলের দেশগুলির পাহাড়ি মালভূমির যেসব এলাকায় আদিম জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে সেখানে স্থানান্তর কৃষি পদ্ধতি দেখা যায়। পৃথিবীর যে সকল জায়গায় স্থানান্তর কৃষি প্রচলন রয়েছে সেগুলি হল
 
1. এশিয়া: ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, শ্রীলংকা ফিলিপাইনস প্রভৃতি দেশে।
 

>> ভারতে স্থানান্তর কৃষির অবস্থান:

A. উত্তর-পূর্ব ভারত: মনিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশ মেঘালয় প্রকৃতির রাজ্যে।
 
B. মধ্য ভারত: ঝাড়খন্ড, ছত্রিশগড়, ওড়িশা প্রভৃতি রাজ্যে
 
C. দক্ষিণ ভারত: অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক কেরল প্রভৃতি রাজ্যে।
 
এছাড়াও রাজস্থানের পশ্চিমে বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে স্থানান্তর কৃষি প্রচলিত রয়েছে।
 
2. মধ্য দক্ষিণ আমেরিকা: মেক্সিকো ভেনিজুয়েলা ব্রাজিল প্রভৃতি দেশে স্থানান্তর কৃষি প্রচলিত রয়েছে।
 
3. আফ্রিকা: আফ্রিকা মহাদেশের কঙ্গো গণপ্রজাতন্ত্র সুদানে স্থানীয় কৃষি প্রচলিত রয়েছে।
 
স্থানান্তর কৃষি পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর কেন -  CLICK HERE
 

II. স্থানান্তর কৃষির বিভিন্ন নাম:

1. ভারতের স্থানান্তর কৃষির বিভিন্ন নাম

   A. উত্তর-পূর্ব ভারত ঝুম বা জুম
 
   B. মধ্যপ্রদেশ ছত্রিশগড় মশান, বেওয়ার
 
   C. ওড়িশা অন্ধ্রপ্রদেশ পোডু
 
   D. কেরালা পোনম
 
2. শ্রীলংকা চেনা
 
3. মায়ানমার টাঙ্গিয়া
 
4. বাংলাদেশ ঝুম
 
5. থাইল্যান্ড তামরাই, সুইডেন
 
6. ইন্দোনেশিয়া হুমা
 
7. মালয়েশিয়া লাডাং
 
8. ফিলিপিনস কেইনজিন
 
9. ভেনেজুয়েলা কোনুকো
 
10. ব্রাজিল রোকা বা রোসা
 
11. মেক্সিকো পানামা মিলপা
 
12. কঙ্গো গণপ্রজাতন্ত্র মালোলে বা মাসোল
 
 

III. স্থানান্তর কৃষির বৈশিষ্ট্য:

1. পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত: এই কৃষিব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ নির্ভর। মাটির স্বাভাবিক উর্বরতা বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে কৃষিকাজ করা হয়।
 
2. অরণ্যচ্ছেদন: অরণ্যচ্ছেদন এই কৃষি ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। জঙ্গল কেটে আগুন লাগিয়ে জমি সাফ করে সেই জমিতে কৃষি কাজ করা হয়।
 
3. ভূমির প্রকৃতি: স্থানান্তর কৃষি ক্রান্তীয় অঞ্চলে মালভূমি বা পাহাড়-পর্বতের ঢালু অংশে বিক্ষিপ্তভাবে করা হয়।
 
4. কৃষি জমির পরিমাণ: স্থানান্তর কৃষি সাধারণত দুর্গম অরণ্যাবৃত পার্বত্য অঞ্চলে করা হয় বলে কৃষি জমির পরিমাণ খুব কম এবং কৃষি জোতগুলি ছোট ছোট হয়।
 
5. কৃষি জমির পরিবর্তন: 2/3 বছরের জন্য মাটির প্রাকৃতিক উর্বরতাকে কাজে লাগিয়ে কৃষি কাজের পর কৃষি জমিবদল করে অন্যত্র কৃষিকাজ এই কৃষি ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
 
6. পেশিশক্তি কায়িক শ্রমের প্রাধান্য: স্থানান্তর কৃষিতে জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে বীজ বোনা, চারা গাছ রোপন, শস্য কাটা প্রভৃতি কাজে জৈবশক্তি হিসেবে মানুষের পেশিশক্তি কায়িক শ্রম দ্বারা কৃষিকাজ করা হয়।
 
স্থানান্তর কৃষি স্থায়ী কৃষির পার্থক্য -  CLICK HERE
 
7. যন্ত্রপাতির ব্যবহার: এই কৃষিতে উন্নত ভারী যন্ত্রের ব্যবহার হয় না। শুধুমাত্র কাঠ লোহার তৈরি লাঙল, কুঠার, কাস্তে কোদাল প্রভৃতি প্রাচীন যন্ত্রপাতির সাহায্যে কৃষিকাজ কাজ করা হয়।
 
8. জমির গোষ্ঠী মালিকানা: এই কৃষি ব্যবস্থাতে কৃষিজমি গুলি ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে মনে করা হয় না। কৃষিজমিগুলি হল সকল আদিবাসী উপজাতি মানুষের সম্পত্তি অর্থাৎ গোষ্ঠীর যৌথ সম্পদ বলে বিবেচনা করা হয়।
 
9. কৃষিজ ফসল: স্থানান্তর কৃষির ফসলের মধ্যে খাদ্যশস্য প্রধান, উল্লেখযোগ্য ফসলগুলি হল ধান, ভুট্টা, বাজরা, মিষ্টি আলু, চিনাবাদাম কলা প্রভৃতি। এছাড়াও সামান্য পরিমাণে সবজি চাষও করা হয়।
 
10. উৎপাদনের পরিমাণ: এই কৃষি ব্যবস্থায় অবৈজ্ঞানিক প্রথায় প্রাচীন অনুন্নত পদ্ধতিতে কৃষি কাজ করা হয় বলে হেক্টরপ্রতি এবং মাথাপিছু উভয়ক্ষেত্রেই উৎপাদনের পরিমাণ খুব কম হয়।
 
11. জীবিকাসত্ত্বাভিত্তিক: ফসল উৎপাদনের পরিমাণ কম বলে কোন উদ্বৃত্ত থাকেনা যা উৎপাদন হয় সবটাই কৃষকের পরিবারের জীবিকা নির্বাহের জন্য ব্যবহৃত হয় বলে এই কৃষি ব্যবস্থা জীবিকাসত্ত্বাভিত্তিক চরিত্রের।
 
12. দুর্বল অর্থনীতি: খাদ্যশস্য ছাড়া বাণিজ্যিক অর্থাৎ অর্থকারী শস্য উৎপাদন করা হয় না এবং যা উৎপাদন হয় তাতে বাণিজ্যের জন্য কোন খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত থাকেনা বলে স্থানান্তর কৃষিতে অর্থনীতি দুর্বল প্রকৃতির হয়
 
Theme images by chuwy. Powered by Blogger.
close