পশ্চিম ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্প গড়ে ওঠার কারণ
পশ্চিম ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণ:
ভারতের একক বৃহত্তম শিল্প হল কার্পাস বয়ন শিল্প। প্রতিবছর ভারতে যে পরিমাণ শিল্পজাত দ্রব্য উৎপন্ন হয়, তার প্রায় 14% কার্পাস বয়ন শিল্পজাত। জাতীয় আয়ের 4% আসে কার্পাস বয়ন শিল্প থেকে। কার্পাস বিশুদ্ধ শ্রেণীর কাঁচামাল হওয়ায় সারা ভারতজুড়েই বস্ত্রশিল্প কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। ভৌগোলিক বন্টন অনুযায়ী পশ্চিম ভারতের গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে সর্বাধিক কার্পাস বয়ন শিল্পের কেন্দ্রীভবনের ঘটেছে। পশ্চিম ভারতের মুম্বাই ও আমেদাবাদকে কেন্দ্র করে কার্পাস বয়ন শিল্পের একদেশীভবনের কারণগুলি হল –
B. আমদানিকৃত কার্পাস তুলা: মুম্বাই ও অন্যান্য বন্দরে মাধ্যমে মিশর, সুদান থেকে সহজে দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলা আমদানির শিল্পের কাঁচামাল চাহিদা পূরণ করে।
C. কৃত্রিম তন্তু: বর্তমানে বস্ত্র কারখানাগুলিতে অধিক টেকসই কৃত্রিম তন্তুর ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। পেট্রোরসায়ন শিল্প উন্নত হওয়ায় এই অঞ্চলে কৃত্রিম তন্তু সহজলভ্য হয়েছে।
D. রাসায়নিক দ্রব্য: পশ্চিম ভারতে পেট্রোরসায়ন শিল্পে উন্নত বলে বস্ত্রশিল্পের অন্যান্য কাঁচামাল, যেমন- রং, কস্টিক সোডা, ব্লিচিং পাউডার প্রভৃতি সহজে পাওয়া যায়।
2. অনুকূল জলবায়ু: আরব সাগরের নিকটবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এখানকার সমভাবাপন্ন আর্দ্র জলবায়ু বস্ত্র শিল্পের উন্নতির পক্ষে সহায়ক হয়েছে। কারণ –
I. আর্দ্র জলবায়ুতে সুতা ছেঁড়ার সম্ভাবনা কম।
II. শ্রমিকরা অনেক পরিশ্রম করতে পারে।
III. শ্রমিকরা সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়ে না।
IV. কাজে একঘেয়েমি আসে না।
3. প্রয়োজনীয় জল: কার্পাস বয়ন শিল্পের জন্য প্রচুর পরিমাণে পরিশুদ্ধ জল প্রয়োজন। তাই নদী বা হ্রদের তীরবর্তী এলাকায় কার্পাস বয়ন শিল্পকেন্দ্রগুলি গড়ে উঠেছে।
4. বন্দরের অবস্থান: মুম্বাই, নভসেবা, কান্ডালা ও সুরাট প্রভৃতি বন্দরের অবস্থান এই অঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের কেন্দ্রীভবনের উপযোগী হয়েছে। এর ফলে –
I. দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলা বিদেশ থেকে আমদানি সহজে হয়েছে।
II. পশ্চিমের দেশগুলি থেকে বস্ত্রশিল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আমদানি করতে সুবিধা হয়।
III. উৎপন্ন বস্ত্র বিদেশে রপ্তানী করতে সুবিধা হয়।
5. শক্তি সম্পদ: পশ্চিম ভারতের যেসকল বিদ্যুৎকেন্দ্র কার্পাস বয়ন শিল্পের একদেশীভবনে সাহায্য করেছে, সেগুলি হল
A. তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র: ট্রম্বে, নাসিক, আমেদাবাদ ও ধুবরান বিদ্যুৎকেন্দ্র।
B. জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র: উকাই, কয়না, খোপালী ও ভীরা প্রভৃতি কেন্দ্রের বিদ্যুৎ।
C. পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র: কাঁকড়াপাড়া, তারাপুর ইত্যাদি বিদ্যুৎকেন্দ্র।
6. উন্নত পরিবহন: পশ্চিম, মধ্য, দক্ষিণ-মধ্য ও কোঙ্কন রেলপথ এবং 3, 4, 6, 7, 8 প্রভৃতি জাতীয় সড়কের মাধ্যমে ভারতের অন্যান্য প্রান্তের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ফলে কার্পাস উৎপাদক অঞ্চলগুলি থেকে বস্ত্র কারখানায় কাঁচাতুলা আমদানি ও তৈরি বস্ত্র দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রপ্তানির সুবিধা হয়েছে।
7. মূলধনের সুবিধা: স্থানীয় পার্সি, গুজরাটি ও ভাটিয়া শিল্পপতিদের মূলধন বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার (LIC, IDBI, UTI প্রভৃতি) অর্থের যোগান পশ্চিম ভারতের কার্পাস বয়ন শিল্পের কেন্দ্রীভবনে সাহায্য করেছে।
8. সুলভ শ্রমিক: মহারাষ্ট্রের ডেকানট্রাপ অঞ্চল কৃষিতে অউন্নত হওয়ায় শিল্পে প্রয়োজনীয় সুলভ শ্রমিক পাওয়ার সুবিধা হয়েছে।
9. চাহিদা ও বাজার: পশ্চিম ভারতের মুম্বাই, আমেদাবাদ, সুরাট, পুনে প্রভৃতি ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলিতে কার্পাস বস্ত্রের প্রচুর চাহিদা রয়েছে, তাছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ও আন্তর্জাতিক বাজারে সুতিবস্ত্রের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, যা পশ্চিম ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্পের কেন্দ্রীভবনে সাহায্য করেছে।
1. কাঁচামালের প্রাচুর্য: কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল গুলি হল –
A. স্থানীয় কার্পাস তুলা: রেগুর মৃত্তিকা সমৃদ্ধ মহারাষ্ট্র ও গুজরাটে প্রচুর পরিমাণে কার্পাস চাষ হয়। এই অঞ্চলের উৎপাদিত কার্পাস মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের কার্পাস বয়ন শিল্পকেন্দ্রগুলিতে ব্যবহৃত হয়।I. আর্দ্র জলবায়ুতে সুতা ছেঁড়ার সম্ভাবনা কম।
I. দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলা বিদেশ থেকে আমদানি সহজে হয়েছে।
A. তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র: ট্রম্বে, নাসিক, আমেদাবাদ ও ধুবরান বিদ্যুৎকেন্দ্র।