skip to main |
skip to sidebar
জাপানের লৌহ ইস্পাত শিল্প উন্নতির কারণ:
জাপান পৃথিবীর অন্যতম লৌহ ইস্পাত শিল্পে উন্নত দেশ। কাঁচামালের অভাব সত্ত্বেও উন্নত গুণমানের জন্য সমগ্র বিশ্বে জাপানে উৎপাদিত ইস্পাতের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এখানকার টোকিও, ইয়োকোহমা, কাওয়াসাকি, কোবে, ওসাকা, মুরোরান ও ইয়াওয়াটা প্রভৃতি স্থানে বৃহদায়তন লৌহ ইস্পাত শিল্প কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। কাঁচামালের অভাব সত্ত্বেও এখানে লৌহ ইস্পাত শিল্পের উন্নতির কারণ গুলি হল –
A. প্রাকৃতিক কারণ:
1. দ্বৈব অবস্থান: জাপান একটি দ্বীপ রাষ্ট্র হওয়ার জন্য নৌপরিবহনে যথেষ্ট উন্নত, এর ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাথে জলপথে জাপানের বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে।
2. আমদানিকৃত কাঁচামাল: ইস্পাত উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল জাপানে বিশেষ পাওয়া যায় না। জাপান জলপথে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সহজ আমদানি করতে পারে। আমদানিকৃত কাঁচামাল গুলি হল।
I. আকরিক লোহা: ভারত, আমেরিকা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা।
II. কয়লা: অস্ট্রেলিয়া,
চিন আমেরিকা, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া।
III. অন্যান্য কাঁচামাল: জাপান ম্যাঙ্গানিজ, চুনাপাথর, ক্রোমিয়াম ভারত ও চিন থেকে আমদানি করে।
3. সুলভ জলবিদ্যুৎ: জাপানের মধ্যভাগের পার্বত্য অঞ্চলের খরস্রোতা নদী গুলি থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে জলবিদ্যুৎ পাওয়া যায় যা স্বল্প ব্যয়ে উন্নত মানের ইস্পাত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ।
4. নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু: জাপানের মধ্য অক্ষাংশীয় নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে অবস্থান ও উপকূলে সমভাবাপন্ন জলবায়ু শ্রমিকদের পরিশ্রমী ও কর্মদক্ষ করেছে।
B. অর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণ:
1. উন্নত প্রযুক্তি: জাপান উন্নত প্রযুক্তির দেশ হওয়ায় লৌহ ইস্পাত শিল্পের অত্যন্ত উন্নতমানের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বলে জাপানের ইস্পাতের গুণগত মান যথেষ্ট উন্নত।
2. সুলভ দক্ষ শ্রমিক: জাপান কারিগরি বিদ্যায় অত্যন্ত উন্নত এবং এটি একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। ফলে ইস্পাত শিল্পে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ শ্রমিকের অভাব হয় না। তাছাড়াও জাপানের জাতীয়তাবোধ সম্পন্ন মানুষ অত্যন্ত পরিশ্রমী ও সুদক্ষ হওয়ায় শিল্প উন্নতির সহায়ক হয়েছে।
3. পরিতক্ত লোহা আমদানি: দেশের বড় বড় শহরগুলিতে অনেক পরিত্যক্ত লোহা পাওয়া যায়। তাছাড়াও জাপান আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে প্রচুর পরিত্যক্ত আমদানি করে। জাপানে উন্নতমানের বাতচুল্লিতে এই পরিত্যক্ত লোহার ব্যবহার উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করেছে।
4. অসংখ্য বন্দরের অবস্থান: দ্বীপরাষ্ট্র জাপানের ভগ্ন ও গভীর উপকূলে অসংখ্য বৃহদায়তন স্বাভাবিক পোতাশ্রয় যুক্ত বন্দর গড়ে উঠেছে যেমন টোকিও, ইয়োকোহমা, কোবে, ওসাকা ও ইয়াওয়াটা প্রভৃতি। এই সকল বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করা কাঁচামালের উপর ভিত্তি করে বন্দর অঞ্চলেই লৌহ ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে উঠেছে ও উৎপাদিত ইস্পাত পণ্যসামগ্রী রপ্তানির সুবিধা হয়েছে।
5. অভ্যন্তরীণ উন্নত পরিবহন: জাপানের অভ্যন্তরীণ সড়ক পরিবহন, জলপথ পরিবহন ও রেলপথ পরিবহন উন্নতমানের হওয়ায় শিল্পজাত পণ্যসামগ্রী দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে দ্রুত প্রেরণ করা যায়।
6. সরকারি উদ্যোগ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে জাপানের অর্থনীতি বিকাশের জন্য সরকারের আর্থিক সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা ছিল জাপানের লৌহ ইস্পাত শিল্পের বিকাশের অন্যতম কারণ।
7. চাহিদা ও বাজার: টোকিও-ইয়াকোহামা এবং কোবে-ওসাকা সমেত সমগ্র জাপান মোটরগাড়ি নির্মাণ, জাহাজ নির্মাণ, ইলেকট্রিক্যাল সমেত ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে অত্যন্ত উন্নত। ফলে ইস্পাতের চাহিদা এখানে অত্যন্ত বেশি এবং জাপানের সস্তা উন্নতমানের ইস্পাতের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপুল চাহিদা রয়েছে।
এছাড়া শিল্প স্থাপনের উন্নত পরিকাঠামো, বিভিন্ন অর্থলগ্নিকারী সংস্থার শিল্পে মূলধন বিনিয়োগ, আধুনিক বিপণন ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইস্পাত প্রস্তুতকারী সংস্থার ( নিপ্পন স্টিল, কাওয়াসাকি স্টিল) অবস্থান কাঁচামালের অভাব সত্ত্বেও জাপানকে বিশ্বের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ লৌহ ইস্পাত উৎপাদক দেশে পরিণত করেছে।