চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে বা কার্স্ট অঞ্চলে ভৌমজলের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ সমূহ | Karst Erosional Landforms
চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে ভৌমজলের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ
চুনাপাথর ও ডলোমাইট দ্বারা গঠিত কার্স্ট অঞ্চলে ভৌমজল ভূপৃষ্ঠ ও ভূ-অভ্যন্তরে কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিশ্রিত জল বা কার্বনিক অ্যাসিড যুক্ত জল মূলত দ্রবন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন আকৃতি ও আয়তনবিশিষ্ট ক্ষয়জাত ভূমিরূপ গঠন করে থাকে। অবস্থান, উৎপত্তি:র কারণ ও প্রক্রিয়া প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে কার্স্ট ভূমিরূপকে প্রধানত তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়।যথা-
A. ভূপৃষ্ঠস্থ ভূমিরূপ
B. অবনমিত ভূমিরূপ
C. উপত্যকা সাদৃশ্য ভূমিরূপ
মাঝারি থেকে মৃদু ঢাল যুক্ত কার্স্ট অঞ্চলে দ্রবন প্রক্রিয়ায় চুনাপাথর থেকে সৃষ্ট এক ধরনের লালবর্ণের মৃত্তিকার স্তর সঞ্চিত হয় একে টেরারোসা বলে। 'Terra' শব্দের অর্থ মৃত্তিকা এবং 'Rossa' শব্দের অর্থ লাল।
1. টেরারোসার গভীরতা এক-দু মিটার থেকে কয়েক মিটার পর্যন্ত হয়।
2. টেরারোসা অনেকটা ল্যাটেরাইট মাটির মত হয়।
3. ক্রান্তীয় অঞ্চলের টেরারোসাকে বক্সাইট বলে এবং বক্সাইট থেকে অ্যালুমিনিয়াম প্রস্তুত হয়।
অপ্রবেশ্য ও খাড়া ঢাল যুক্ত চুনাপাথরের দ্রবন প্রক্রিয়ায় শিলাপৃষ্ঠে যে অসংখ্য সমান্তরাল অগভীর রৈখিক খাতের সৃষ্টি হয় এবং যা তীক্ষ্ণ শীর্ষ দেশ দ্বারা বিভক্ত হয়, ফরাসি ভাষায় তাকে ল্যপিস এবং জার্মান ভাষায় কারেন বলে।
1. রৈখিক খাত গুলো পরস্পর সমান্তরাল হয়।
কার্স্ট অঞ্চলে চুনাপাথরে দ্রবন কার্যের ফলে দারণ বা ফাটল বরাবর অসংখ্য গভীর রৈখিক ও দীর্ঘ গর্ত সৃষ্টি হলে তাকে গ্রাইক বলে। বড় আকারের গ্রাইকে বোগাজ বলে।
গ্রাইকের মধ্যবর্তী প্রায় সমতল পৃষ্ঠ বিশিষ্ট উচ্চভূমিকে ক্লিন্ট বলে।
1. সিঙ্ক হোল:
কার্স্ট অঞ্চলের দ্রবন কার্যের ফলে যে ফানেলের মতো আকৃতি বিশিষ্ট অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গর্ত সৃষ্টি হয় তাকে সিঙ্ক হোল বলে।
1. সিঙ্ক হোলগুলি ফানেলের আকৃতির হয়।
কার্স্ট অঞ্চলে দ্রবণ ক্ষয় বা ধসের ফলে ভূপৃষ্ঠে সিঙ্ক হোল অপেক্ষা বৃহত্তম গর্ত বা উন্মুক্ত গহবর সৃষ্টি হয়, একে সোয়ালো হোল বলে।
1. অসংখ্য সিঙ্ক হোল একসাথে যুক্ত হলে সোয়ালো হোল গঠিত হয়।
কার্স্ট অঞ্চলে অনেকগুলি সিঙ্ক হোল বা সোয়ালো হোল একত্রে মিলিত হয়ে যে বৃহৎ ও আবদ্ধ গর্ত সৃষ্টি করে, সেগুলিকে ডোলাইন বলে।
1. ডোলাইনগুলির গভীরতা প্রায় 5-15 মিটার হয়ে থাকে।
ডোলাইনের থেকে অগভীর কিন্তু অধিক বিস্তৃত অর্থাৎ আকারে বড়ো হলে তাকে দ্রবণ প্যান বলে।
ডোলাইনের নিম্নাংশে অপ্রবেশ্য শিলাস্তর থাকলে বা অতি সূক্ষ্ম কর্দমকণা সঞ্চিত হয়ে তলদেশের ছিদ্র গুলি বন্ধ করে দেয়। ফলে ডোলাইনে জল সঞ্চিত হয়ে যে হ্রদ সৃষ্টি হয়, তাকে কার্স্ট হ্রদ বলে।
1.কার্স্ট হ্রদগুলি সবসময় আঞ্চলিক ভৌমজলতলের ওপরে অবস্থান করে।
একাধিক ডোলাইন পরস্পর মিলিত হয়েছে যে বৃহৎ আকৃতির গর্তের সৃষ্টি করে তাকে উভালা বলে।
1. উভালাগুলি লম্বাটে বা উপবৃত্ত নানা আকৃতিবিশিষ্ট হয়।
চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে উভালা অপেক্ষা বৃহৎ, দীর্ঘায়িত, সমতল তলদেশ বিশিষ্ট এবং চারিপাশে খাড়া ঢালযুক্ত উপবৃত্তাকার অবনমিত ভূভাগকে পোলজি বলে।
1. পোলজির তলদেশ সমতল প্রকৃতির হয়।
কার্স্ট অঞ্চলে পোলজির ভিতরে চুনাপাথরের অবশিষ্টাংশ টিলার আকারে অবস্থান করে, এই অবশিষ্ট পাহাড় গুলোকে হামস বলে। এদের ঢাল অধিকাংশ ক্ষেত্রে 20 ডিগ্রী থেকে 30 ডিগ্রি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে ভূ-অভ্যন্তরে দ্রবণ ক্ষয়ের ফলে চুনাপাথরের স্তর ধসে গিয়ে যে বিশাল আয়তনের গহ্বর বা শূন্যস্থানের সৃষ্টি হয়, তাকে গুহা বলে। এই গুহা আয়তনে বড়ো হলে তাকে ভূগহ্বর বলে।
1. ভৌমজলের দ্রবণ ও অবঘর্ষ ক্ষয়ের ফলে উৎপন্ন একটি বিশালআয়তনের ক্ষয়জাত ভূমিরূপ।
চুনাপাথরে উপর দিয়ে প্রবাহিত নদী দ্রবন প্রক্রিয়ায় চুনাপাথরকে পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিচের দিকে দ্রুত নিম্নক্ষয় করে খাড়া ঢাল বিশিষ্ট সংকীর্ণ ও সুগভীর উপত্যকা সৃষ্টি হয় তাকে গিরিখাত বলে।
কার্স্ট অঞ্চলে প্রবাহিত নদী যখন সিঙ্ক হোল বা সোয়ালো হোলে প্রবেশ করে তখন নদীর উপত্যকার বিস্তার ওই সিঙ্ক হোল বা সোয়ালো হোল পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং ওইখানে উপত্যকাটি হঠাৎ শেষ হয়ে যায়, এই সুগভীর ও সংকীর্ণ উপত্যকাকে অন্ধ উপত্যকা বলে।
চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে নদী যখন সিঙ্ক হোল বা সোয়ালো হোলে প্রবেশ করে তখন সিঙ্ক হোল পরবর্তী নদী উপত্যকা জনশূন্য হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। এই উপত্যকাকে শুষ্ক উপত্যকা বলে।
কার্স্ট অঞ্চলে নদী সিঙ্ক হোলের মাধ্যমে ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে দ্রবন কার্যের মাধ্যমে ভূগর্ভের পথ বিস্তৃত ও গভীর হয়ে সুড়ঙ্গের সৃষ্টি হয়, একে প্রাকৃতিক সুড়ঙ্গ বলে।