উভয় গোলার্ধে 30 ° থেকে 45 ° অক্ষাংশের মধ্যে উপক্রান্তীয় অঞ্চলে মহাদেশের পশ্চিম প্রান্তের জলবায়ুকে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বলে।
কোপেনের জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগ অনুসারে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুকে 'Cs' জলবায়ু বলে।
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর অবস্থান:
I. অক্ষাংশগত অবস্থান:
উভয় গোলার্ধে ক্রান্তীয় অঞ্চলে 10° থেকে 30° অক্ষাংশে মৌসুমী জলবায়ু অবস্থান করে।
II. দৈশিক অবস্থান:
এই জলবায়ুর অন্তর্গত প্রধান দেশ সমূহ হল –
A. ইউরোপের পর্তুগাল, ফ্রান্স, স্পেন ও ইটালি।
B. আফ্রিকার আলজেরিয়া, লিবিয়া, মিশর ও মরক্কো।
C. এশিয়ার তুরস্ক সিরিয়া, ইস্রায়েল ও লেবানন।
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য:
শুষ্ক গ্রীষ্মকাল, আর্দ্র শীতকাল ও মেঘমুক্ত ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল –
1. উষ্ণতা:
I. গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা: ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা 15° সেন্টিগ্রেড থেকে 28° সেন্টিগ্রেড হয়।
II. শীতকালীন উষ্ণতা: এই জলবায়ু অঞ্চলে শীতকালীন উষ্ণতা 5° সেন্টিগ্রেড থেকে 10° সেন্টিগ্রেট হয়।
III. উষ্ণতার প্রসর: এই জলবায়ু অঞ্চলে শীত ও গ্যাসের উষ্ণতা পার্থক্য 11° C থেকে 17° C হয়ে থাকে। উপকূল থেকে অভ্যন্তর ভাগের দিকে উষ্ণতার প্রসর ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।
2. বায়ুরচাপ:
I. গ্রীষ্মকালীন বায়ুরচাপ: গ্রীষ্মকালে সূর্যের উত্তরায়নের জন্য বায়ুচাপ বলয় গুলি উত্তরে সরে গেলে এই অঞ্চলে উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় অবস্থান করে।
II. শীতকালীন বায়ুরচাপ: শীতকালে সূর্যের দক্ষিণায়নের জন্য বায়ুচাপ বলয় গুলি দক্ষিনে সরে গেলে এই অঞ্চলে মেরু বিত্ত নিম্নচাপ বলয় অবস্থান করে।
3. বায়ুপ্রবাহ:
I. গ্রীষ্মকালীন বায়ুপ্রবাহ: এই সময় উত্তর গোলার্ধে উত্তর অংশে উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় অবস্থান করায় নিম্নগামী শুষ্ক বায়ু ও দক্ষিণ অংশে আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বিপরীত অবস্থা বিরাজ করে।
II. শীতকালীন বায়ুপ্রবাহ: এই সময় উত্তর গোলার্ধে উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় দক্ষিণে সরে যাওয়াই এ অঞ্চলে পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয়।
III. স্থানীয় বায়ু প্রবাহ: ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো অসংখ্য ভিন্নধর্মী স্থানীয় বায়ু প্রবাহ। প্রধান প্রধান স্থানীয় বায়ু গুলি হল মিস্ট্রাল, বোরা, স্যান্টা অ্যানা, সিরোক্কো, ঘিবলি।
4. মেঘাচ্ছন্নতা ও বৃষ্টিপাত:
I. মেঘমুক্ত আকাশ: ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে বছরের অধিকাংশ দিন আকাশ মেঘমুক্ত থাকে এবং উজ্জ্বল সূর্যকিরণ পাওয়া যায়।
II. শুষ্ক গ্রীষ্মকাল: সূর্যের উত্তরায়নের জন্য এই সময় উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় অবস্থান করায় নিম্নগামী শুষ্ক ভারী বায়ু ও শুষ্ক আয়ন বায়ু প্রবাহিত হওয়ায় বৃষ্টিপাত হয় না, ফলে গ্রীষ্মকাল শুষ্ক প্রকৃতির হয়।
III. শীতকালীন বৃষ্টিপাত: সূর্যের দক্ষিণায়নে বায়ুচাপ বলয় গুলি দক্ষিণেশ্বরে গেলে এই অঞ্চলে আর্দ্র পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়, তাই শীতকাল আর্দ্র প্রকৃতির।
5. তুষারপাত:
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে সাধারণত তুষারপাত হয় না। তবে অনেক সময় শীতকালে মেরু শীতল বায়ুপুঞ্জের জন্য উষ্ণতা অনেকটা কমে গেলে মাঝেমাঝে তুষারপাত হয়।